
সুন্দরবনঃ বিগত দু বছরের রেকর্ড ভেঙে এবার বিপুল পরিমাণ পাখির দর্শন পেয়েছেন সুন্দরবন পাখি উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা। গত বছর যেখানে ৮৮৮৬টি পাখির দেখা মিলেছিল সুন্দরবনে, সেখানে এবার ৩১৯২৬ টি পাখির দেখা মিলেছে। গত বুধবার সজনেখালি থেকে এই তৃতীয় পাখি উৎসবের সূচনা হয়েছিল, রবিবার সকালে তার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে।
ক্যানিং থেকে উদ্ধার বিপুল পরিমান কার্তুজ
গত বছরের মত এবারেও মোট ২৪ জন পক্ষীপ্রেমীকে পাখি উৎসবে অংশগ্রহনের সুযোগ দিয়েছে বন দফতর। মোট ছটি দলে ভাগ হয়ে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প ও ২৪ পরগনা বন বিভাগের মোট ছটি আলাদা আলাদা রেঞ্জ এলাকায় ঘুরে বেড়ান এই পাখি প্রেমিরা। সম্পূর্ণ মহিলা পক্ষীপ্রেমীদের একটি দলও এই পাখি উৎসবে এবার অংশ নিয়েছিলেন। পাখিদের ছবি তোলার পাশাপাশি কোথায় কি ধরনের পাখি দেখা গেল সে সব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন তাঁরা। প্রতিটি দলে একজন করে পাখি বিশেষজ্ঞ ও বন দফতরের একজন কর্মী ছিলেন। চারদিন ধরে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে তাঁরা যে ছবি তুলেছে এবং যে তথ্য সংগ্রহ করেছেন সে সব বিচার বিশ্লেষণ করেই এবারের মোট পাখির সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার মোট ১৫৪ প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে সুন্দরবনে। জার মধ্যে ৫১ টি পরিযায়ী প্রজাতির পাখি রয়েছে। সুন্দরবনের স্থানীয় ১০৩ প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে এবারের পাখি উৎসবে।
প্রথম বার পাখি উৎসবের রিপোর্ট বিচার-বিশ্লেষণ করে বন দফতর জানিয়েছিল, ১৪৫ প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছিল সুন্দরবনে। ৫০৬৫টি পাখির দেখা পেয়েছিলেন যোগদানকারীরা। সে বার শীতের একেবারে শেষ লগ্নে উৎসব হয়েছিল। বন দফতরের তরফে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা গিয়েছে দ্বিতীয় পাখি উৎসবের রিপোর্ট অনুযায়ী সুন্দরবনে পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা অনেকক্ষানি বেড়েছে। তাঁদের দেওয়া রিপোর্ট এবং তথ্য অনুযায়ী সুন্দরবনে আনুমানিক ৮০টি প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দেখা মিলেছে দ্বিতীয় পাখি উৎসবে। প্রথম পাখি উৎসবের তুলনায় দ্বিতীয় পাখি উৎসবে ১০ প্রজাতির পাখির দেখা কম মিললেও পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা বাড়ায় খুশি হয় বন দফতর। পাশাপাশি অনেক বেশি সংখ্যায় পাখির দেখাও মিলেছিল দ্বিতীয় উৎসবে। তবে এবারের পাখির সংখ্যা কার্যত সব রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে। এরমধ্যে সজনেখালি রেঞ্জে ৬৪ প্রজাতি, বসিরহাট রেঞ্জে ৭৩ প্রজাতি, জাতীয় উদ্যান পূর্ব রেঞ্জে ৭০ প্রজাতি, জাতীয় উদ্যান পশ্চিম রেঞ্জে ৮১ প্রজাতি, মাতলা রেঞ্জে ১০৮ প্রজাতি ও কলস রেঞ্জে ৯৫ প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেছে বন দফতর। এসবের পাশাপাশি তৃতীয় পাখি উৎসবে ইউরেশিয়ান কার্লো, ব্রাউন উইং কিংফিসার, গ্রে প্লোভার, লেজার স্যান্ড প্লোভারের মত বহু বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির পাখির দেখাও মিলেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেছে বন দফতর। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন বলেন, “ এবার যেহেতু পাখি উৎসবের সময় একদিন বাড়ানো হয়েছে ফলে আরও বেশি এলাকা ঘুরে ঘুরে পাখির ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছেন অংশগ্রহণকারীরা। পাশাপাশি পাখি বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সুন্দরবনের বেশ কিছু এলাকায় পর্যটক ও মৎস্যজীবীদের ঢোকা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ফলে সেই এলাকাগুলিকে পাখিরা নিরাপদ মনে করায় সেখানে আরও বেশি করে নিজেদের বাসস্থান তৈরি করেছে, ফলে এই বিপুল পরিমাণ পাখির দেখা মিলেছে এবারের পাখি উৎসবে।” পাখি উৎসবে অংশগ্রহণকারী বিশিষ্ট বন্যপ্রাণ চিত্রগ্রাহক ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পেরে আনন্দিত। এবার প্রচুর পরিমাণে পাখির দেখা মিলেছে। পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠছে এই সুন্দরবন।”