
সোনারপুরঃ সোনারপুরের মানিকপুর এলাকায় মর্মান্তিক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। মানসিক অবসাদ ও আর্থিক সমস্যার কারণে ২৫ বছর বয়সী অভিষেক দাস নিজেই নিজের জীবনের ইতি টেনেছে বলে প্রাথমিক অনুমান পুলিশের। অভিষেক তার বাবা পিন্টু দাসের সঙ্গে ভাড়া থাকত। শুক্রবার সকালে বাবা কাজে বেরিয়ে যাওয়ার পরই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে কাজ শেষে বাড়ি ফিরে দেখেন ঘরের মধ্যে অভিষেক ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশীদের ডাকেন এবং ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, অভিষেক দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিল। তার মা ছোটবেলায় মারা যাওয়ার পর থেকে সে বাবার সঙ্গেই থাকত। সে কোনো উপার্জন করত না এবং আর্থিক অনটনের মধ্যে দিন কাটছিল। অভিষেকের চারপাশে প্রচুর ধারদেনা হয়ে গিয়েছিল, যা নিয়ে সে উদ্বেগে ছিল। এছাড়া, পুলিশ জানতে পেরেছে, সে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল এবং নিয়মিত টাকা ধার চাইত। এমনকি তার প্রেমিকার কাছ থেকেও সে টাকা চাইত বলে জানা গেছে। ঘটনার কিছুক্ষণ আগে সে তার প্রেমিকাকে মেসেজ করে টাকা চেয়েছিল। কিন্তু প্রেমিকা টাকা দিতে অস্বীকার করে এবং সম্পর্ক রাখবে না বলে জানিয়ে দেয়। এরপরেই অভিষেক মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বলে অনুমান করা হচ্ছে। অভিষেকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশ আত্মহত্যার কারণ বিশদে খতিয়ে দেখছে। তার ফোন ও মেসেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে, যাতে জানা যায়, তার জীবনের শেষ মুহূর্তের ঘটনা কীভাবে ঘটেছিল।
আরও পড়ুনঃ বেআইনীভাবে গাছ কাটার অভিযোগে পাঁচজন গ্রেফতার, সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত
অভিষেকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, অভিষেক বেশ কিছুদিন ধরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল এবং মাঝে মাঝেই নেশায় আসক্ত থাকত। কেউ কেউ বলছেন, আর্থিক অনটন ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েনই তাকে এই চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। এই ঘটনার পর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আরও সচেতন হওয়া জরুরি। আর্থিক অনটন ও ব্যক্তিগত জীবনের সংকট মানুষকে মানসিক অবসাদের দিকে ঠেলে দেয়। অভিষেক যদি কাউকে নিজের সমস্যার কথা খোলাখুলি বলতে পারত, তাহলে হয়তো এই পরিণতি এড়ানো যেত। অভিষেকের এই মর্মান্তিক পরিণতি সমাজের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। মানসিক অবসাদ ও আর্থিক সংকটের সঙ্গে লড়াই করা মানুষদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সহযোগিতা করা এবং সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে।