
আঁখি চক্রবর্তীঃ আজ এমন এক নগরীর গল্প বলব যা ইতিহাসের থেকেও পুরোনো, ঐতিহ্যের থেকেও প্রাচীন, এমনকি কিংবদন্তীর থেকেও আদিম, এমন এক নগরী যেখানে জীব আর শিব একাকার হয়ে যায়, এমন এক নগরী যা আত্মাকে তো মুক্তি দেয়, কিন্তু হৃদয়কে বন্দি করে নেয় এক নিমেষে, আজ গল্প বলব বারাণসীর, বাঙালির চিরচেনা বেনারসের।
আরও পড়ুনঃ আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব সামলে জীবসেবায় ব্যস্ত কুলতলি থানার বড়বাবু সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মীরা
শুনেছি মহাদেব নিজে না ডাকলে তাঁর কাছে যাওয়ার সুযোগ দুর্লভ। বহুকালের সুপ্ত ইচ্ছে তিনি শুনেই নিলেন এবার, ফলস্বরূপ হঠাৎ বেনারস যাত্রার প্ল্যানিং। আমাদের যাবার দিন ঠিক হল ২ রা মার্চ, বাহন বিভূতি এক্সপ্রেস, ওখানে পৌঁছাবো পরের দিন সকালে। মহাকুম্ভের ভিড় নিয়ে একটা সংশয় থাকলেও দেবাদিদেবের নাম নিয়ে বেরিয়েই পড়ল ছোট বড়ো মিলে আমাদের আট জনের দল। কুম্ভের ঝঞ্ঝাটে কী হবে না হবে ভেবে হোটেল বুকিং করেছিলাম প্রায় ১ মাস আগে, Shri Ram Paying Guest House, মণিকর্ণিকা ঘাটের কাছে। হাওড়ার ১২ নং প্ল্যাটফর্ম থেকে আমাদের ট্রেন ছাড়লো সন্ধ্যে ৭টা ৫৫ মিনিটে।একটু গল্পগুজব করে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম সাত তাড়াতাড়িই।যত রাত বেড়েছে ঘুমের ভেতর পরের দিন সকালটা দেখার তাগিদও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। কিন্তু এই পথে এলে ট্রেন আপনার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেবেই। সকালবেলা মোবাইলে লাইভ আপডেট ঘেঁটে দেখলাম ৪০ মিনিট মতো দেরি তো হবেই বারাণসী জংশন পৌঁছোতে।ফ্রেশটেশ হয়ে, রামপেয়ারী চা খেয়ে জমিয়ে বসলাম জানালার পাশটাতে।কখনও আগুনরঙা পলাশ,শিমূল,রুদ্রপলাশের বন,কখনও বা ফসলবোনা ক্ষেত, কখনও বা ঘরবসতি ছাড়িয়ে বিভূতি ছুটছে বিহারের বুক দিয়ে উত্তরপ্রেদেশের উদ্দেশ্যে, বাবা বিভূতিভূষণের ডেরায়।
কথামতো ট্রেন পৌঁছোনোর ১ ঘন্টা আগে গেস্ট হাউস থেকে ফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ রাখা হয়েছিল প্রতি মুহূর্তে, কখন পৌঁছোবো, কীভাবে যেতে হবে, সুবিধেঅসুবিধে সবকিছুর। এই করতে করতেই কখন যেন কাশী এসে পড়ল। ব্রীজের ওপর থেকে দেখলাম নীচে গঙ্গার জল তখন গলিত সোনার মতো কী অপার্থিব দ্যুতিতে প্রবাহিতা, দেখলে দু’চোখের দৃষ্টি পবিত্র হয়ে যায় নিমেষে। ডানপাশে নমোঘাট আর বামপাশে সমস্ত বারাণসী শহর যেন স্থির প্রতীক্ষা করছে নিজের গল্পের পান্ডুলিপির প্রথম পাতাটি মেলে ধরার জন্য। বারাণসী জংশনে ট্রেন ঢুকল ১০ টা ১৫ তে। বুকে অনেকগুলো অনুভূতির অদ্ভুত একটা মিশেল নিয়ে পা রাখলাম শিব নগরীতে।