
সোনারপুরঃ সবাই যখন রং –এর উৎসবে মাতোয়ারা তখন বাড়িতে একাকি বসে রাজপুরের যুবক অসিত বিশ্বাস ৷ সোনারপুরের রাজপুরের বাসিন্দা ৷ বর্তমানে জীবনযাত্রার নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি ৷ তার জীবনে বিপর্যয় নেমে ২০২১ সালে দোলযাত্রার দিন ৷ সেদিন তার বছর পাঁচেকের ভাইঝি পিচকারি দিয়ে রং ছোঁড়ে তার মুখ লক্ষ্য করে ৷ঘটনার সাথে সাথেই বাম চোখে প্রচণ্ড যন্ত্রনা পান তিনি ৷ চোখও ফুলে যায় ৷ তখন কোভিডের সময় ৷ সাথে সাথেই ছুটেছিলেন চিকিৎসকের কাছে ৷ কিন্তু তারপর থেকে ক্রমশ তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারাতে থাকেন। দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার কারণে, অমিত আর দোলের দিন রং খেলেন না ৷ আজকের দিনটি তার কাটে অন্ধকার ঘরে বসে ৷ হঠাৎ করেই এই পরিবর্তন তাঁর জীবনে একটি গভীর প্রভাব ফেলেছে, তবে তিনি হারাননি আশা ও সাহস।
বর্তমানে, অসিত তাঁর বৃদ্ধা মায়ের সাথে থাকেন। তাঁর মা, যদিও বয়সের ভারে ক্লান্ত, তবে জীবনের প্রতি দৃঢ় মনোভাব বজায় রেখে একটি দোকান চালিয়ে যাচ্ছেন। একদিকে যখন অমিতের দৃষ্টিশক্তি কমছে, তখন তাঁর মা নিজেদের সংসারের জন্য পুরোদমে কাজ করে চলেছেন। মায়ের এই পরিশ্রম ও দৃঢ়তা অমিতের কাছে এক ধরনের অনুপ্রেরণা। অসিতের তিন দাদা ৷ এই ঘটনার পর থেকে তারাও আর কেউ এই বাড়িতে থাকেন না ৷ তিন ভাই বর্তমানে থাকেন জয়পুরে ৷ সেখানেই তারা কর্মরত ৷ এই বাড়ির সাথে তাদের আর তেমন যোগাযোগ নেই ৷
আরও পড়ুনঃ দোল উৎসব উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা পুলিশের
একাধিক প্রতিভা ছিল অসিতের ৷ ছোটবেলা থেকেই নানান কাজের সাথে যুক্ত ছিল সে ৷ তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল রাজপুরের জগদ্দল গভঃ কলোনী স্কুলে, যেখানে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। এরপর তিনি রাজপুর বিদ্যানিধি স্কুলে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশুনা করেন এবং পরবর্তীতে গড়িয়া অ্যান্ড্রুজ কলেজে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি কমার্স বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন ৷ তবে তার এই খারাপ সময়ে সবসময় অসিতের পাশে থেকেছে তার স্কুলের বন্ধু দেবাশীষ ঘোষ এখনো যে কোনো প্রয়োজনে সে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। একটা সময় নৃত্যও করতেন অসিত, কিন্তু বর্তমানে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা ও শারীরিক কারণে তিনি নৃত্য করা বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে, নৃত্য ও অন্যান্য শিল্পকলা নিয়ে তাঁর আগ্রহ এখনও অটুট রয়েছে। এখন তিনি বেশিরভাগ সময় বাড়িতে বসে নিজের দিন কাটাচ্ছেন। তাঁর জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই এসেছে, কিন্তু সে সব কিছুই তাকে হারিয়ে যেতে দেয়নি। বরং প্রতিটি অভিজ্ঞতা তাকে আরও দৃঢ় এবং সাহসী করেছে।
সম্পর্কে তার মামার মেয়ে মৌসুমী মন্ডলের সাহায্যে তিনি বাড়িতেই একটি বিউটি পার্লার চালাচ্ছেন ৷ তিনি নিজেও কিছু কাজ শিখেছিলেন ৷ সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনিও সাজানোর কাজে হাত লাগান ৷ অসিত বিশ্বাসের জীবনকে দেখলে, তার মধ্যে এক ধরনের ধৈর্য, সংগ্রাম এবং ইতিবাচক মনোভাব প্রতিফলিত হয়। তিনি বুঝে গেছেন, জীবনে সবসময় সুখ বা দুর্ভোগ থাকবে না, কিন্তু আত্মবিশ্বাস এবং নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারলে, যেকোনো পরিস্থিতিতেই জীবনকে সামলে চলা সম্ভব।