সোনারপুরঃ রাজপুর সোনারপুর পুরসভা দেড়শো বছরে পা দিল। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে পুরসভার ইতিহাস নানা পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে। প্রথমে বেহালায় তৈরি হয়েছিল সাউথ সুবার্বান মিউনিসিপালিটি, যার বিস্তার ছিল জয়নগর পর্যন্ত। উন্নত পরিষেবার দাবিতে ১৮৭০ সালে জয়নগর পৌরসভা গঠিত হয়। এরপর রাজপুরের মানুষ উন্নত পরিষেবার দাবিতে আন্দোলন করেন এবং আদালতে যান ৷ তারা জয় লাভ করেন। তখনও বাংলায় সিপাহী বিদ্রোহের রেশ কাটেনি। এরই মধ্যে ১৮৭৬ সালের ১লা এপ্রিল মাত্র পাঁচটি ওয়ার্ড নিয়ে রাজপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুনঃ বারুইপুরে কুকুর ছিনতাইয়ের অভিযোগ, আতঙ্কিত পরিবার
রাজপুর পৌরসভার প্রতিষ্ঠায় স্থানীয় জমিদার নবীন চন্দ্র ঘোষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি পৌরসভার জন্য জমি দান করেছিলেন। রাজপুর বাজারের প্রসিদ্ধির কারণে এই পৌরসভার নামকরণ হয় রাজপুর পৌরসভা। প্রথমদিকে জেলা কালেক্টর পৌরসভা পরিচালনা করতেন এবং এলাকার কোনো বিদ্বজ্জন ভাইস চেয়ারম্যান হতেন। ১৯১২ সালে প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন শ্যামাচরণ চক্রবর্তী। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। ৫টি ওয়ার্ড থেকে বাড়িয়ে ১৪টি ওয়ার্ড করা হয়। ১৯৯৩ সালে সোনারপুর, বোড়াল, গড়িয়া অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে পৌরসভার নাম পরিবর্তন করে রাজপুর সোনারপুর পৌরসভা রাখা হয় এবং ওয়ার্ড সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ২৯টি। পরবর্তী সময়ে, ২০০৯ সালে ওয়ার্ড সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩৫টি। বর্তমানে রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার জনসংখ্যা অনুযায়ী এটি কর্পোরেশন হওয়ার উপযুক্ত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। শহরের উন্নয়ন ও আধুনিক পরিষেবা বৃদ্ধির জন্য প্রশাসন নিয়মিত পর্যালোচনা করছে।
পুরসভার চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, এই বিশেষ উপলক্ষ্যে এক বছর ধরে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। একটি বর্ণাঢ্য পদযাত্রার আয়োজন করা হয়, যা পুরসভার প্রধান কার্যালয় হরিনাভী থেকে রথতলা পর্যন্ত গিয়েছিল। এই পদযাত্রায় রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরা হয়। পৌরসভার কর্মীরা, সেল্ফ হেল্প গ্রুপের মহিলারা এবং সমস্ত পৌরপিতা ও পৌরমাতাগণ এই পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। দেড়শো বছর উদযাপনের অংশ হিসেবে নানা উন্নয়নমূলক কাজকর্ম ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন পৌরপিতা পল্লব কুমার দাস। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, একসময় এখানে জঞ্জাল ফেলার জন্য মহিষের গাড়ি ব্যবহার করা হতো। এরপর ঘোড়ার গাড়ি আসে, আর বর্তমানে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ও যানবাহন ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজপুর সোনারপুর পৌরসভা আধুনিকতার পথে এগিয়ে চলেছে, যা এ অঞ্চলের উন্নয়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
