
সোনালী চক্রবর্তী (শিক্ষিকা)ঃ কয়েকদিনের টানা ছুটি পেতেই আবার বেরিয়ে পড়া ৷ ৫ই জুন, আমাদের ছয় সদস্যের দল — শর্মিষ্ঠা মণ্ডল, সোমা অধিকারী, উৎসবেন্দু ব্যানার্জী, রঞ্জনা ঘোষাল, পদ্মমালা ঘোষ ও আমি ডঃ সোনালী চক্রবর্তী — রওনা দিই এক স্মরণীয় ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। রাত ১১:৪৫টায় হাওড়া স্টেশন থেকে চেন্নাই মেল এক্সপ্রেসে চেপে ভোর ৩:৪৫নাগাদ বালেশ্বর স্টেশনে পৌঁছায় আমরা। তখনও চারিদিক বেশ অন্ধকার ৷ তবে আগে থেকেই আমাদের সমস্ত ব্যবস্থা করা থাকায় কোনও অসুবিধা হয়নি ৷ ষ্টেশন থেকে যাত্রা শুরু হল ৷ আমাদের লক্ষ্য পঞ্চলিঙ্গেশ্বরের লাক্ষ্মী নিবাস হোমস্টের দিকে, যার আয়োজন করেছিলেন অতিথিপরায়ণ বিকাশ কুমার বেহেরা।
সকালের প্রাতরাশ সেরে আমরা রওনা হই ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার এক প্রাকৃতিক বিস্ময় দেবকুন্ডের উদ্দেশ্যে। সিলিপাল ন্যাশনাল পার্কের অন্তর্গত এই জলপ্রপাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ধ্যান-সাধনার এক আশ্চর্য স্থান। এখানে রয়েছে পঞ্চকুন্ড বা পাঁচটি জলের কুণ্ড, প্রতিটি একটি করে জলপ্রপাত থেকে সৃষ্টি। দেবকুন্ডের ঊষর পরিবেশে দাঁড়িয়ে রয়েছে ১৯৪০ সালে ময়ূরভঞ্জ রাজাদের দ্বারা নির্মিত দেবী অম্বিকা মাতার মন্দির। এইসব দর্শন করে ও এখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে আবার আমরা হোটেলে ফিরে এলাম ৷ দুপুরে খাওয়ার জন্য নানানপদের রান্না হয়েছিল ৷ লাঞ্চের পরে আমরা গেলাম কালা ড্যাম—কাপ্তিপাড়া থেকে মাত্র ৮ কিমি দূরে অবস্থিত এই বিশাল জলাধার ঘেরা জায়গা থেকে শিমলিপাল পর্বতমালার দৃশ্য মন কাড়ে। এরপর আমরা পৌঁছাই নিগুড়ি শহরে, যেখানে ভ্রমণ করি ঐতিহাসিক নিগুড়ি রাজবাড়ি এবং জগন্নাথ মন্দির। সন্ধের মধ্যে হোটেলে ফিরে আসি ৷ হোটেলে ফিরে এসে রাতে সবাই মিলে হইহই করে বেশ খানিকটা সময় কাটল ৷
পরদিন সকালে দর্শন করি পঞ্চলিঙ্গেশ্বর মন্দির, যেখানে পাথরের গায়ে প্রাকৃতিক জলধারার ভিতর পাঁচটি শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। এখানকার পরিবেশ যেন আত্মিক শান্তির উৎস। দুপুরের আহারান্তে আমরা বেরিয়ে পড়ি এমামি জগন্নাথ মন্দির, ক্ষীরচোরা গোপীনাথ মন্দির ও ধুবলগড়/বাগদা সমুদ্রসৈকতের উদ্দেশ্যে। এই সৈকত ওড়িশার বালেশ্বর জেলায় অবস্থিত এবং এখন ধীরে ধীরে জনপ্রিয় উইকেন্ড গন্তব্য হয়ে উঠছে। সাদা বালি, নীল জল, বাতাসের মিষ্টি ছোঁয়া আর ঢেউয়ের সুরে এই সৈকতের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে। রাতে ‘ব্লু টাইড’ নামে পরিচিত জৈব-জ্যোতির্ময় জলজ জীবের কারণে সৈকত নীল আলোয় ঝলমল করে ওঠে।
আমাদের পুরো সফরজুড়ে লাক্ষ্মী নিবাসে আরামদায়ক আবাসন এবং বিকাশ কুমার বেহেরার উষ্ণ আতিথেয়তা অভিজ্ঞতাকে আরও মধুর করে তোলে। প্রয়োজনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ৯৯৩৮৪৫০১৬০ নম্বরে। অবশেষে, আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই সোমনাথ নস্করকে, যিনি যাত্রার মাত্র দুই দিন আগে আমাদের টিকিটের বন্দোবস্ত করে ভ্রমণকে সম্ভব করে তুলেছিলেন। এই ভ্রমণ শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, আত্মিক সংযোগ ও বন্ধুত্বের শক্তিও নতুন করে অনুভব করাল।