
নিজস্ব প্রতিবেদনঃ পাহাড় — এক মোহময় ডাক, যা বাঙালীর রক্তে মিশে আছে। কর্মব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি কাটিয়ে একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য সুযোগ পেলেই আমরা ছুটে যাই প্রকৃতির কোলে। পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক বৈচিত্র্য সেই আহ্বানে আরও মাত্রা যোগ করে। উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশ আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের তটরেখা — এর মাঝখানে ছড়িয়ে রয়েছে অপার সৌন্দর্য। এই নিসর্গময়তা উপভোগ করতে চায় প্রতিটি বাঙালী মন, আর সেই আকর্ষণে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা শুরু হয় ছুটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই। তবে ট্রেনের টিকিট পাওয়া এখন কার্যত অসম্ভব। হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলিতে জায়গা মেলে না সহজে। বিকল্প হিসেবে ধর্মতলা বা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাস পরিষেবা বাড়লেও, সেখানেও ভিড় তুঙ্গে। তাই অনেকেই পাড়ি দিচ্ছেন নিজস্ব গাড়ি বা বাইকে করেই। এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও পাহাড়ের প্রতি বাঙালির প্রেম একটুও কমেনি। দার্জিলিং, কালিম্পং, লামাহাটা, সিকিম — চেনা কিংবা অচেনা পাহাড়ি জনপদ হাতছানি দেয় বারবার।
আরও পড়ুনঃ সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৬ লাখ টাকার প্রতারণা, সোনারপুরে গ্রেফতার এক ব্যক্তি
এই ভ্রমণের নেপথ্যে প্রয়োজন পরিকল্পনা ও নিরাপত্তা। আর ঠিক এখানেই উঠে আসে একটি নাম — ম্যাড অ্যাবাউট ট্রাভেল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় ব্লকের পোলেরহাট থেকে যাত্রা শুরু করা এই সংস্থা আজ শুধু রাজ্য নয়, সারা দেশের পর্যটকদের কাছে আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক। শৈল শহর দার্জিলিংয়েও রয়েছে তাদের নিজস্ব অফিস ৷ সংস্থার দুই কর্ণধার সৈকত মন্ডল ও পুজা ব্যানার্জির আন্তরিকতা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনায় গড়ে উঠেছে এক বিশ্বস্ত ভ্রমণপথ। ম্যাড অ্যাবাউট ট্রাভেলের বিশেষত্ব হল ‘ডোর টু ডেস্টিনেশন’ পরিষেবা। শিলিগুড়ি বা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ট্রেন পৌঁছনোর আগেই পর্যটকের মোবাইলে আসে চালকের ফোন। স্টেশনের বাইরে গাড়ি অপেক্ষায় থাকে। এরপর শুরু হয় প্রকৃতির মাঝে গন্তব্যের দিকে যাত্রা। পথে দ্রষ্টব্য স্থান দেখানো থেকে শুরু করে প্রয়োজন অনুযায়ী সহযোগিতা — চালক যেন হয়ে ওঠেন পরিবারের একজন সদস্য।
এই সংস্থার পরিষেবা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বহু পর্যটক। যাদবপুরের ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ চন্দ বলেন, “সিকিম আমার সবচেয়ে প্রিয় গন্তব্য। ম্যাড অ্যাবাউট ট্রাভেলের স্বচ্ছতা, হোম স্টের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও গাড়ি চালকদের ব্যবহার — সব মিলিয়ে অসাধারণ অভিজ্ঞতা।” তিনি সম্প্রতি ৬ দিন ৫ রাতের ইস্ট সিকিম ট্রিপে গিয়েছিলেন এবং জানান, সংস্থার দুই কর্ণধার প্রতিদিন পর্যটকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, যা এই সফরকে করে তোলে বিশেষ। সিউড়ির আইনজীবী শান্তনু হাজরা ও তাঁর স্ত্রী সহেলি হাজরাও চার বছর ধরে এই সংস্থার মাধ্যমে ভ্রমণ করছেন। তারা বলেন, “আমরা কোথায় যেতে চাই, কতদিনের সফর, এবং কেমন পছন্দ — তা বললেই সংস্থা এক নিখুঁত পরিকল্পনা দেয়। বাজেটও একেবারে স্বচ্ছ।” চালকরা শুধু গাইড নয়, বরং অভিভাবকের মতো দেখভাল করেন। শিক্ষিকা অনুসুয়া ভট্টাচার্য তাঁর ছোট ছেলের শারীরিক সমস্যা থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, “ম্যাড অ্যাবাউট ট্রাভেল প্রতিটি দিক মাথায় রেখে ট্রিপের পরিকল্পনা করে, এমনকী হোম স্টেতেও ছিল বিশেষ যত্ন।” গত তিন বছরে তিনি আর অন্য কোনও ট্রাভেল এজেন্সির দ্বারস্থ হননি। নাটক ও টেলিভিশনের পরিচিত মুখ, দক্ষিণ কলকাতার লেক গার্ডেনস এলাকার বাসিন্দা অরিজিত গাঙ্গুলি একজন নিবিড় ভ্রমণপ্রেমী। ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি দেশ-বিদেশে নানা স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কর্মসূত্রে পরিচয় হয় সৈকতের সাথে, যিনি ‘ম্যাড অ্যাবাউট ট্রাভেল’ সংস্থার অন্যতম কর্ণধার।এই সংস্থার সঙ্গে অরিজিত ইতিমধ্যে দু’বার উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ করেছেন এবং অভিজ্ঞতা তার মতে এককথায় অসাধারণ। তার ভাষায়, “এই সংস্থা একেবারেই ইউনিক। সৈকত এবং পুজার ব্যবহার এতটাই আন্তরিক যে একবার যাওয়ার পর বারবার যেতে মন চায়।”তিনি আরও জানান, হোমস্টে নির্বাচন থেকে শুরু করে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থাপনায় ‘ম্যাড অ্যাবাউট ট্রাভেল’-এর তুলনা নেই। শুধু অরিজিত নন, তার অনেক বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতরাও এই সংস্থার সঙ্গেই নিয়মিত ভ্রমণে যান।হুগলির অয়ন চক্রবর্তী জানান, “কম বাজেটে এত ভাল পরিষেবা একমাত্র এই সংস্থাই দিতে পারে। দার্জিলিংয়ের অফবিট জায়গা খোঁজার সময়েই সংস্থার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। এরপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।” তিনি সম্প্রতি সিল্ক রুট ঘুরে এসেছেন ১৫ জনের একটি দল নিয়ে — ৫ বছর থেকে ৬০ বছরের সদস্যদের সঙ্গে। কোথাও কোনও অসুবিধা হয়নি। আসামের বাসিন্দা, বর্তমানে ব্যাঙ্গালোরে কর্মরত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মইদুল ইসলাম স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরে এসেছেন নর্থ সিকিম। গুরুদোংমার লেকে যাওয়ার বিষয়ে কিছু চালক যখন অস্বীকৃতি জানাচ্ছিলেন, তখন ম্যাড অ্যাবাউট ট্রাভেলের চালক দৃঢ়ভাবে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। মইদুল বলেন, “শেয়ার ট্রিপ হলেও কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি। যা খরচ নিয়েছে সংস্থা, তা একেবারে সঠিক।”
এইসব অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, ম্যাড অ্যাবাউট ট্রাভেল শুধু একটি সংস্থা নয় — এটি এক অনুভূতি। তাদের আন্তরিক ব্যবস্থাপনা, মানবিক যোগাযোগ, এবং খুঁটিনাটি পরিকল্পনায় ভর করে আজ পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়ে গোটা দেশ ও বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে তাদের খ্যাতি। পোলেরহাটের সমাজসেবী কাজী আব্দুল মোমিন বলেন, “এই সংস্থা শুধু পর্যটনের সঙ্গী নয়, পোলেরহাটের নামও উজ্জ্বল করছে রাজ্যজুড়ে।” তিনি নিজেও শীঘ্রই ম্যাড অ্যাবাউট ট্রাভেলের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সংস্থার অন্যতম কর্ণধার সৈকত মন্ডল বলেন, “আমরা মানুষের স্বপ্নের ভ্রমণকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্যই কাজ করি। প্রত্যেকের চাহিদা আলাদা, তাই আমরা সেভাবেই পরিকল্পনা সাজাই।” তার কথায় ঝরে পড়ে এক নিষ্ঠা ও দায়বদ্ধতা। সব মিলিয়ে ম্যাড অ্যাবাউট ট্রাভেল আজ এক বিশ্বস্ত নাম। পাহাড় প্রেমীদের জন্য এটি শুধু গন্তব্যে পৌঁছানোর একটি উপায় নয়, বরং একটি আত্মবিশ্বাস ও নিরাপত্তার আশ্বাস। পাহাড় ডাকছে, আর তার সঙ্গী হোক ম্যাড অ্যাবাউট ট্রাভেল — এটাই এখন পাহাড়প্রেমী বাঙালির প্রথম পছন্দ।
MAD ABOUT TRAVEL
8509870920 & 8240157592