জগদ্দলঃ সোনারপুরের জগদ্দল অঞ্চলের রাশ উৎসব আজ শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং হয়ে উঠেছে স্থানীয় সংস্কৃতির এক অমূল্য অংশ। এই উৎসবের সূচনা করেছিলেন জগদ্দলের বিশিষ্ট কবিরাজ সত্যনারায়ণ দত্ত। তাঁর সহধর্মিণী অন্নপূর্ণা দত্ত ছিলেন তাঁর জীবনের অনুপ্রেরণা। দম্পতির ছয় ছেলে ও পাঁচ মেয়ে—বড় পরিবারে রাশ উৎসবের সময় সবাই মিলে একসাথে যাওয়া সম্ভব হত না। সেই কারণেই পরিবারের সবাইকে এক ছাদের নিচে রাশ দেখার সুযোগ করে দিতে তিনি নিজের বাড়িতেই তৈরি করেন এক অনন্য রাশমঞ্চ।
আরও পড়ুনঃ বাবা আইফোন কিনে না দেওয়ায় চরম সিদ্ধান্ত নবম শ্রেণির ছাত্রের, শোকের ছায়া কুলতলিতে
সেই সময় আটদিন ধরে চলত মেলা, যাত্রা প্রতিযোগিতা আর ধর্মীয় গীতিনাট্য। রামায়ণ ও মহাভারতের নানা কাহিনিকে ঘিরে আয়োজন হতো পুতুল প্রদর্শনী—যা আজও জগদ্দলের সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য ঐতিহ্য। সময়ের সাথে অনেক কিছু বদলেছে, কিন্তু সেই আবেগ, সেই পারিবারিক ঐতিহ্যের রেশ আজও ছড়িয়ে আছে রাশমঞ্চের প্রতিটি কোণে। বর্তমানে রাশ উৎসবকে কেন্দ্র করে জগদ্দল মাঠে বসে বিশাল মেলা। মিষ্টি, তেলেভাজা, পোশাক, সাজার সামগ্রী থেকে শুরু করে ফাস্টফুড, পুচকা, ঘরোয়া ব্যবহারের নানা জিনিস—সবই পাওয়া যায় এই মেলায়। সঙ্গে নাগরদোলা, ড্রাগন ট্রেন আর নানা বিনোদনের আয়োজন শিশু থেকে বয়স্ক—সবাইকে টানে।
আগামী কয়েকদিন ধরে জমজমাট থাকবে এই রাশ উৎসবের চত্বর। স্থানীয়রা যেমন নস্টালজিয়ায় ভাসেন, তেমনই দূরদূরান্ত থেকেও মানুষ ভিড় জমায় এই উৎসবে। সত্যনারায়ণ দত্তের শুরু করা এক পারিবারিক প্রয়াস আজ পরিণত হয়েছে এক বৃহৎ জনউৎসবে—যেখানে ঐতিহ্য, ভক্তি আর আনন্দ একাকার হয়ে যায়।
