
সোনারপুরঃ সোনারপুর থানার অন্তর্গত রাজপুর সোনারপুর পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাসপল্লী মাঠে ঘটে গেল এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড। মদের আসরে ডেকে নিয়ে এসে নৃশংসভাবে খুন করা হল বিশাল সাউ (২৫) নামে এক যুবককে। মাত্র এক বছর আগে বিয়ে হয়েছিল বিশালের। তার পরিবারে আড়াই মাসের এক সন্তান, স্ত্রী, বাবা ও মা রয়েছেন। বাইক নিয়ে ছাতু বিক্রি করে সংসার চালাত সে। বাবা সত্যেন্দ্র সাউয়ের ছোট একটি মুদির দোকান রয়েছে বলে জানা গেছে।
বন্ধুর ফোন, রাতের ডাক আর মৃত্যুর ফাঁদ
মঙ্গলবার রাত ১০টা ৪২ মিনিটে ফোন আসে বিশালের কাছে। আকাশ পাইক নামে তার এক বন্ধু তাকে বাইরে আসতে বলে। তার সঙ্গে ছিল রাকেশ ও রাহুল নামে আরও দু’জন। বিশালের স্ত্রী তাকে বারবার বাইরে যেতে মানা করেন, কিন্তু সে “একটু পরেই আসছি” বলে বেরিয়ে যায়। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে সুভাসপল্লীর মাঠে বসেছিল তাদের মদের আসর। সেই আসরেই কোনো বিষয়ে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। এরপর আকাশ, রাকেশ ও রাহুল মিলে বিশালকে বাঁশ দিয়ে মারধর করতে থাকে। অভিযোগ, পেছন থেকে তার মাথায় আঘাত করা হয়, এবং নির্মমভাবে মারধর করে তাকে ফেলে রেখে চলে যায় অভিযুক্তরা।
রক্তাক্ত বিশালকে উদ্ধার করেও বাঁচানো গেল না
প্রতিবেশীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে বিশালের বাবা সত্যেন্দ্র সাউ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। পরিবারের সদস্যরা রাত প্রায় ১টা নাগাদ খবর পান এবং তড়িঘড়ি করে বিশালকে সোনারপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই ভোররাতে তার মৃত্যু হয়।
গ্রেপ্তার তিন অভিযুক্ত, পুলিশের হেফাজতের আবেদন
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ অভিযুক্ত আকাশ পাইক, রাকেশ এবং রাহুলকে গ্রেপ্তার করেছে। আজ তাদের বারুইপুর মহকুমা আদালতে তোলা হবে। পুলিশ ইতিমধ্যে তাদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে, যাতে আরও তথ্য পাওয়া যায়।
অপরাধীদের রুখতে নজরদারির দাবি স্থানীয়দের
এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সুভাসপল্লী এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় মহিলাদের অভিযোগ, রাত নামলেই এই মাঠে সমাজবিরোধীদের দাপট বাড়ে। মাদক ও মদের আসর বসে, ফলে রাতে তারা বাড়ির বাইরে বের হতে ভয় পান। প্রশাসন ও পৌরসভাকে বারবার জানানো হলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এলাকাবাসীরা দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি, সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য রুখতে নিয়মিত পুলিশি টহলদারির ব্যবস্থার দাবি উঠেছে। পুলিশি হস্তক্ষেপে এই সমস্যা আদৌ মিটবে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।