সোনারপুরঃ সোনারপুর মহাবিদ্যালয়ে ফের ‘দাদার কীর্তি’ ঘিরে বিতর্ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কলেজ চত্বরে নবাগত এক ছাত্রী দিয়ে মাথা টেপাচ্ছেন বছর ৪৪-এর ছাত্রনেতা প্রতীক কুমার দে। ভিডিও সামনে আসতেই তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে কলেজ চত্বর থেকে রাজনীতির অঙ্গন পর্যন্ত।
প্রতীক কুমার দে এই কলেজের ছাত্রই নন ৷ তবে বহুপদে বহাল এক রাজনৈতিক কর্মী। তিনি সোনারপুর মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র পরিষদের কো-অর্ডিনেটর, রাজপুর টাউন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন। অভিযোগ, বারুইপুর কলেজের প্রাক্তনী হয়েও কীভাবে তিনি সোনারপুর কলেজে এমন প্রভাব বিস্তার করছেন? বিরোধীদের অভিযোগ, এর নেপথ্যে রয়েছেন সোনারপুর দক্ষিণের বিধায়ক লাভলী মৈত্র। এই ভিডিও ঘিরে কাউন্সিলর ও কলেজের প্রাক্তনী পাপিয়া হালদার বলেন, “আমি আগেই অভিযোগ জানিয়েছিলাম। আজকের ঘটনা প্রমাণ করল আমি ভুল বলিনি। এটা অত্যন্ত লজ্জার।” তাঁর দাবি, প্রতীকের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক হেনস্থার অভিযোগও আগে করেছেন তিনি। এই ইস্যুতে মুখ খুলেছেন সদ্য সাসপেন্ডেড তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেত্রী রাজন্যা হালদারও। তাঁর প্রশ্ন, “একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন প্রতীককে এত পদ দেওয়া হল? কে বা কারা তাকে এই ক্ষমতা দিয়েছে?” তিনি সতর্ক করে বলেন, “এই ধরনের লোকদের দলে রেখে দিলে ভবিষ্যতে মনোজিত মিশ্রের মতো ঘটনা ঘটাতে কতক্ষণ?” বামফ্রন্টের তরফে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন সিপিএম নেতা ও আইনজীবী সায়ন ব্যানার্জি। তিনি বলেন, “সোনারপুরের মাথা আর কত হেট করবেন লাভলী মৈত্র? বহিরাগতদের দিয়ে কলেজ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টাই এখন চলছে। এটা সোনারপুরের অপমান।”
তবে পুরো ঘটনার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন তৃণমূলের একাংশ। রাজপুর টাউন তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি আকাশ বসু বলেন, “ভিডিওটি ভুয়ো। ছাত্র পরিষদকে বদনাম করতেই এটা ভাইরাল করা হয়েছে।” একই দাবি করেন তৃণমূল নেতা প্রতীক দত্তও। যে ছাত্রীকে ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, তিনি নিজেও জানিয়েছেন, “প্রতীকদা আমার দাদার মতো। ভিডিওটি ফেক। এটি কলেজের ইউনিয়ন রুমও নয়। কেউ ইচ্ছা করে আমাদের বদনাম করতে চেয়েছে।” তাঁর কথায়, “প্রতীকদা কখনও কোনও খারাপ ব্যবহার করেননি।” এই ঘটনার পরেই প্রশ্ন উঠছে, কলেজ কি আদৌ শিক্ষার কেন্দ্র না কি ছাত্র রাজনীতির আড়ালে ক্ষমতার মঞ্চ হয়ে উঠছে? অভিযুক্ত ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও দলীয় নেতৃত্ব কেন নিশ্চুপ? বিধায়ক লাভলী মৈত্রর সঙ্গে এই বিষয়ে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি বা মেসেজের উত্তরও দেননি। সামাজিক এবং রাজনৈতিক মহলে এখন একটাই প্রশ্ন—দল কবে মুখ খুলবে? আর ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?
