
নরেন্দ্রপুরঃ শর্ট ভিডিও বানানোর নেশা যে কতটা ভয়ংকর মোড় নিতে পারে, তার এক মর্মান্তিক উদাহরণ উঠে এসেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুর থানার অধীন এলাকায়। ভিডিও কনটেন্ট তৈরির আকর্ষণে জড়িয়ে এক দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী এমন এক প্রতারণার ফাঁদে পড়ে, যা তাকে আর্থিক এবং মানসিকভাবে চরম বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই নরেন্দ্রপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে এবং ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। অভিযোগকারিণী ছাত্রী, যিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি, জানিয়েছেন যে তাঁর দীর্ঘদিন ধরেই শর্ট ভিডিও বানানোর শখ ছিল। সেই শখের সূত্রেই তাঁর পরিচয় হয় সোনারপুর এলাকার এক যুবকের সঙ্গে।
আরও পড়ুনঃ ফরতাবাদের নেশামুক্তি কেন্দ্রে যুবকের রহস্যমৃত্যু, হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ পরিবারের
একটি ভিডিও শুট করতে গিয়ে আলাপ, তারপর ধীরে ধীরে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। দুজন মিলে ঠিক করেন রিল বানিয়ে ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রাম থেকে উপার্জনের চেষ্টা করবেন। একসঙ্গে ভিডিও বানানোও শুরু হয়। একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলা হয় এবং সেটি মনিটাইজ করার চেষ্টাও চলতে থাকে। কিন্তু ঠিক এই সময় থেকেই সমস্যার শুরু। অভিযোগ, সম্পর্কের অবনতি হতেই অভিযুক্ত যুবক শুরু করে ব্ল্যাকমেল। ছাত্রীর অজান্তে কিছু ব্যক্তিগত ও আপত্তিকর ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেয় সে। ভিডিও সরাতে অনুরোধ করলেও অভিযুক্ত তা না করে উল্টে টাকা দাবি করে। বাধ্য হয়ে ছাত্রী কন্যাশ্রী প্রকল্পে পাওয়া টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা অভিযুক্তকে দেয়। কিন্তু এরপরেও ব্ল্যাকমেল ও হুমকি অব্যাহত থাকে। এই ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছাত্রী শেষমেশ পরিবারের সহায়তায় নরেন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত যুবকের খোঁজ চলছে এবং তাঁকে দ্রুত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এই ঘটনার পর থেকেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিশেষ করে কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা প্রতারণায় ব্যবহারের ঘটনায় প্রশাসনিক মহলেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে তরুণ-তরুণীদের উত্সাহ, শর্ট ভিডিও বানানোর হিড়িক এবং তা থেকে উপার্জনের স্বপ্ন অনেক সময়েই তাদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই ধরনের ঘটনা কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতির কারণ নয়, বরং সমাজের তরুণ প্রজন্মের জন্যও একটি বড় সতর্ক সংকেত। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনীয় সাইবার টেকনোলজির সাহায্যে অভিযুক্তের মোবাইল, সোশাল অ্যাকাউন্ট এবং ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইন সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হতে পারে। পুলিশ ও সমাজকর্মীদের বার্তা, অনলাইনে অপরিচিতদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং কোনও ধরনের মানসিক চাপ বা ব্ল্যাকমেলিং-এর শিকার হলে, দেরি না করে আইনি সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন।