রাজপুরঃ রাজপুর সোনারপুর পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল কংগ্রেসের এক সাংগঠনিক বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও পৌর পারিষদ সদস্যা সোনালী রায়। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ সোনারপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক লাভলী মৈত্র। সোনালী রায়ের অনুপস্থিতিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। কিছুদিন আগেই সোশাল মিডিয়ায় সোনালী রায় এক পোস্টে দাবি করেছিলেন, তিনি ও তার পরিবার আক্রান্ত হতে পারেন। কারোর নাম না করলেও অনেকেই মনে করছেন, তার এই বক্তব্য ছিল বিধায়ক ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে। বিধায়কের সঙ্গে তার সম্পর্ক যে শীতল, তা একাধিক ঘটনার পর স্পষ্ট হয়েছে।
২৫ নম্বর ওয়ার্ডে সোনালী রায়ের বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজনকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেই অভিযোগ উঠেছে। শুধু কাউন্সিলরই নন, এই মিটিংয়ে ডাকা হয়নি ওয়ার্ড সভাপতি, যুব সভাপতি, ছাত্র সভাপতি, মহিলা সভাপতি সহ শাখা সংগঠনের প্রায় সব নেতৃত্বকে। এমনকি বেশ কয়েকজন বুথ প্রেসিডেন্ট, বুথ লেভেল এজেন্ট, ওয়ার্ড কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন না বা ডাক পাননি বলে জানা গিয়েছে। এই ওয়ার্ড থেকেই গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সায়নী ঘোষ ৫৯৬ ভোটে লিড পেয়েছিলেন। এখন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে ওয়ার্ডে দলীয় অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তৃণমূলের সাধারণ কর্মীরা।
আরও পড়ুনঃ ম্যাড অ্যাবাউট ট্রাভেল: পাহাড়প্রেমীদের নির্ভরযোগ্য সঙ্গী
সভায় লাভলী মৈত্র বলেন, “এটা কর্মী সংযোগ সভা। যারা দুর্দিনে দলের পাশে থেকেছেন, তারাই আজ উপস্থিত। তৃণমূল কংগ্রেস ঐক্যবদ্ধ। এই ওয়ার্ডের কর্মীরা কোনও দাম্ভিকতা, স্বেচ্ছাচারিতা মেনে নেয় না। তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালোবাসে এবং দলের পতাকাকে সামনে রেখে লড়াই করেন।” তিনি আরও বলেন, “বেইমানি আমার রক্তে নেই। আমি কখনও বেইমানি করব না।” কাউকে নাম না করেই কটাক্ষ করে বলেন, “জনপ্রতিনিধি হয়ে কেবল সোশাল মিডিয়ায় বেঁচে থাকা যথেষ্ট নয়, মানুষের মধ্যে কাজ করে তাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে হবে।”
সোনালী রায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি কিছু বলতে চাননি। তবে সোশাল মিডিয়ায় ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্টে লেখেন, “আমার কাজ তুমি করো, তোমার কাজ আমি করি, আমরা মিলেমিশে কাজ করি।” এই পরিস্থিতি নিয়ে যাদবপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সদস্য অরিজিত মুখার্জি বলেন, “এখানে দীর্ঘদিন ধরে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব চলছে। এটি ভাগ বাটোয়ারা সংক্রান্ত বিবাদ। বাইপাস সংলগ্ন বহুতল এলাকায় সিণ্ডিকেট ব্যবসা, জমির দালালি এবং টাকার ভাগ নিয়ে বিবাদ তীব্র হয়েছে।” স্থানীয় বাসিন্দা ও গণতান্ত্রিক লেখক ও শিল্পী সংঘের যুগ্ম সম্পাদক ভাষ্কর চ্যাটার্জি বলেন, “এটি তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিষয়, আমাদের মন্তব্য করার কিছু নেই।”
সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজপুর সোনারপুর পুরসভার পৌরপ্রধান পল্লব দাস, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বলাই চন্দ্র বারিকসহ একাধিক নেতৃত্ব। তৃণমূল কংগ্রেসের এই অভ্যন্তরীণ কোন্দল দলের ভিতরে অসন্তোষ ও বিভাজনের চিত্র স্পষ্ট করছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ছবি বিধায়ক লাভলী মৈত্রর ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া ৷
