
সোনারপুর: পোষ্য নয়, পরিবারের এক সদস্যই যেন! তাই তার হারিয়ে যাওয়া মানে গোটা পরিবারে নেমে আসে এক শোকের ছায়া। যাদবপুরের সন্তোষপুর এলাকার কলেজ পড়ুয়া দেবপ্রিয়া ঘোষের পোষ্য বেড়াল মিনি—নিখোঁজ হওয়ার পর কেটে গিয়েছিল টানা দু’সপ্তাহ। অশান্তি, উৎকণ্ঠা, কান্না আর আশা–সব মিলিয়ে এক টানটান নাটক চলছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার খেয়াদহের আটঘড়া এলাকায়। অবশেষে সোমবার বিকেলে সেই মিনি ফিরে এসেছে ঘরে।
আরও পড়ুনঃ হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ বিড়াল, ক্ষোভে ফেটে পড়লেন দেবপ্রিয়া ঘোষ — তদন্তে নেমেছে নরেন্দ্রপুর থানা
ঘটনার সূত্রপাত গত ২৯ এপ্রিল, যখন দেবপ্রিয়া ও তাঁর পরিবার মিনিকে অস্ত্রোপচারের জন্য আটঘড়ার একটি পেট ক্লিনিকে নিয়ে যান। পোষ্যটির ৭ মে ছাড়া পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ঘটতে শুরু করে অস্বাভাবিক ঘটনা। দেবপ্রিয়ার অভিযোগ, ক্লিনিকে ভর্তি করানোর পর থেকেই মিনির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। দেখা করতে চাইলেও নানা অজুহাতে তাঁদের ক্লিনিকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। ভিডিয়ো কলেও পোষ্যকে দেখানো হয়নি। সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে ৫ মে, যখন পেট ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জানায়—মিনি ক্লিনিক থেকে পালিয়ে গিয়েছে! তৎক্ষণাৎ নরেন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন দেবপ্রিয়ারা। এর পর শুরু হয় এক অন্য লড়াই। মায়ের সঙ্গে বাড়ি বাড়ি, দোকানে দোকানে ঘুরে বেড়ান দেবপ্রিয়া। মিনির ছবি দেওয়া পোস্টার ছাপিয়ে এলাকাজুড়ে লাগিয়ে দেন। হ্যান্ডবিল বিলি করেন। এমনকি মিনিকে খুঁজে দিলে ২ হাজার টাকার পুরস্কার ঘোষণাও করেন তিনি।
সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্তটি আসে সোমবার। ওই পেট ক্লিনিকের কাছেই একটি আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীরা পোস্টারে দেওয়া নম্বরে ফোন করে জানান, একটি বেড়ালকে তাঁদের আবাসনে ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ছুটে যান দেবপ্রিয়া ও তাঁর পরিবার। তাঁদের দেখেই ছুটে আসে মিনি! অশ্রুসিক্ত চোখে মিনি-কে কোলে তুলে নেন দেবপ্রিয়া। পুরস্কার হিসেবে দুই হাজার টাকা তুলে দেন নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে।“মিনি আমাদের পরিবারের এক সদস্য। ওকে হারিয়ে আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। পেট ক্লিনিকের গাফিলতিই এর কারণ। ওদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত,”—বলেন দেবপ্রিয়া।