
আঁখি চক্রবর্তীঃ শয়ন আরতি দেখে ফিরতে আগেরদিন বেশ অনেকটা রাত হয়ে গেছিল। সকালে দু’চোখ মেলে বুঝলাম ঘোর লেগে আছে এখনও। আগের রাতটা কী আদেও সত্যি ছিল না কল্পনা তা বোঝার চেষ্টা করতে করতেই অনেকটা সময় কাটিয়ে ফেললাম। আজ সকালে গঙ্গাস্নানে যাবার কথা। বড়োরা গেল সবাই, আর আমরা ছোট সদস্যরা স্নানটান করে তৈরি হয়ে নিলাম বেনারসের প্রসিদ্ধ মন্দিরগুলির দর্শনে যাব বলে। এখানে বলে রাখি এসব মন্দিরগুলি দেখতে গেলে সকাল সকাল যাওয়াই ভালো কারণ ১১:৩০ টার মধ্যে প্রায় বেশিরভাগ মন্দিরের দরজাই বন্ধ হয়ে যায়।
প্রথম পর্বের লিঙ্কঃশিবঠাকুরের আপন দেশে : বেনারস ভ্রমণ (প্রথম পর্ব)
গেস্ট হাউসেরই চেনাজানা এক টোটো করে বেরিয়ে পড়ালাম আমরা সবাই। প্রথমেই পৌঁছোলাম সঙ্কটমোচন মন্দিরে। মঙ্গলবার বলে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বাইরে থেকে ডালা কিনে পুজোও দেওয়া হল। পুজোপাঠ মিটিয়ে লস্যি খেলাম একটি দোকান থেকে, সত্যিই বেনারসের লস্যির স্বাদই আলাদা! এরপর আমাদের গন্তব্য দূর্গামন্দির। সেখান থেকে তুলসীমানস টেম্পল, ত্রিদেব টেম্পল, ভারতমাতা টেম্পল,BHU, রামনগর ফোর্ট দেখে যখন ফিরছি তখন সূয্যিমামা নিজের তেজ জানান দিচ্ছে ভালোই। অথচ মজার বিষয় হল বেনারসের গলিতে ঢুকলেই কেমন যেন শীতশীত করে সবসময়ই। বাইরে থেকে দুপুরের খাবার খেয়েই ফিরেছিলাম। একটু জিরিয়ে নেবার পর বেরিয়ে পড়লাম আবার। এবার উদ্দেশ্য নৌকাভ্রমণ। এখানে যদিও যন্ত্রচালিত বোট বেশি পাওয়া যায় তবু হাতে টানা নৌকাও আছে। আমরা একটি বোটেই চড়ে বসলাম। বেনারসে ছোট বড়ো মিলিয়ে ঘাটের সংখ্যা চুরাশিটি। গঙ্গার জলে ঢেউ তুলে আমাদের বোট এগিয়ে চলল একটি ঘাট ছাড়িয়ে অন্য ঘাটের দিকে। এখানে গঙ্গার জলে এক অদ্ভুত নীল আভা খেলা করে। পুণ্যস্রোতার হিমশীতল জলের গন্ধ মিশে থাকে বাতাসের গায়। গঙ্গাবক্ষে এ নৌকাবিহারের অভিজ্ঞতা সত্যিই বড্ডো মনোরম। আমাদের প্ল্যান ছিল আজ বোট থেকেই গঙ্গা আরতি দেখব। তবে তার জন্য অন্য আরেকটি বোট করতে হবে যা ঘাটের কাছে বাঁধা থাকে। আমরা উঠে বসলাম সেটিতে। শুরু হল আরতি। অপূর্ব সে দৃশ্য। তবে আমার মতে নৌকা থেকে আরতির দৃশ্য ছবির মতো সুন্দর হলেও, আরতির সেই আধ্যাত্মিক অনুভূতি কিন্তু একমাত্র ঘাটে বসেই পূর্ণমাত্রায় পাওয়া যায়। দু’টো অভিজ্ঞতা দু’রকমভাবে সুন্দর।
দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্কঃ‘শিবঠাকুরের আপন দেশে : বেনারস ভ্রমণ (দ্বিতীয় পর্ব)
আরতি শেষ হলে আমরা সিঁড়ি ভেঙে উঠে এলাম মার্কেটের দিকে। এখানে রাস্তার দু’পাশে অজস্র দোকান। নিজের মন খুশি কেনাকাটা করতে পারেন, আমরাও করলাম কিছু কিছু। এরপর রাতের খাবার কিনে ফিরে এলাম গেস্টহাউসে, পরের দিন যে বড্ডো ভোর ভোর উঠতে হবে, তাঁর সাথে সাক্ষাতে যেতে হবে যাঁর বুকের ভেতর কাশীর বাস, বাবা বিশ্বনাথের পুজো দিতে যেতে হবে।