
আঁখি চক্রবর্তীঃ সেদিন রাতটা ছিল এক অদ্ভুত আবেগের, এক অদৃশ্য টানাপোড়েনের। বারবার মনে হচ্ছিল — এ রাত যেন শেষ না হয়। কালই তো ফিরে যাওয়ার দিন। ছেড়ে যেতে হবে বেনারসকে — এই শহরের অলিগলির মায়াজাল, গঙ্গার শান্ত স্নেহধারা, শত শত বছরের পুরাতন দেবালয়ের ছায়া আর বাবা বিশ্বনাথের চির অবারিত দুয়ার। কিন্তু মন বলছিল — এই ফেরা শুধু শরীরের ফেরা, হৃদয় তো এখানেই পড়ে থাকবে। কাশীকে নিয়েই ফিরব মনে মনে। আর এ ফেরা তো চিরতরে নয় — আবার তো ফিরতেই হবে, বারবার।
চতুর্থ পর্বের লিঙ্কঃ https://sonarpurupdate.com/varanasi-travel-experience-part-4/
সকালে ঘুম ভাঙতেই ঠিক করলাম — পায়ে হেঁটে শেষবারের মতো ঘাট ঘুরে দেখব। গন্তব্য অসিঘাট। শুনেছি এখানে সকালে গঙ্গা আরতি হয়। কিন্তু নিয়তির ইশারায় সে দেখা আর হয়ে ওঠেনি। মণিকর্ণিকা ঘাট থেকে হাঁটতে হাঁটতেই পৌঁছে গেলাম অসিঘাটের কাছাকাছি। ততক্ষণে আরতি শেষ। তবে ঘাটের শান্ত পরিবেশ, গঙ্গার ঢেউয়ের গুনগুন আর বাতাসে ভাসতে থাকা ধূপের গন্ধ — এই সবকিছু আপন মনেই একরাশ শান্তি ঢেলে দিল মনে। এরপর ফিরে এলাম গেস্ট হাউসে। স্নান সেরে তৈরি হয়ে গেলাম মা অন্নপূর্ণার ভান্ডারে শেষবারের মতো পেটপুরে খেতে। খাবারের সঙ্গে যেন আশীর্বাদও জড়িয়ে ছিল — পরিতৃপ্তি যে শুধু রসনায় নয়, আত্মায়ও ছড়িয়ে পড়েছিল।
ফেরার আগে একটু কেনাকাটা। মনে মনে ঠিক করেছিলাম — বেনারসী পান না খেয়ে ফিরব না। সেই মনকাড়া পান মুখে দিয়ে রওনা দিলাম গেস্ট হাউসের দিকে। এবার সত্যিই ফেরার সময়। সন্ধ্যের ট্রেন বারাণসী জংশন থেকে। গাড়িতে উঠে যখন বেনারস শহরকে বিদায় জানাতে গেলাম, মনে মনে উচ্চারণ করলাম —
‘নম: পার্বতীপতয়ে হর হর মহাদেব’।
ঠিক সেই মুহূর্তে যেন কে জেনো মনের ভিতর থেকে বলে উঠল —
‘যাবি কোথায়? এই যে এখানে এসে পড়লি একবার, এখানেই বাঁধা হয়ে থাকলি। এখানেই ফিরতে হবে তোকে বারবার। আর আমি তো তোর সঙ্গেই চললাম।’