
সোনারপুরঃ রুপকথাকেও হার মানায় এমন এক বাস্তব কাহিনি গড়েছেন সোনারপুরের হরিনাভীর বাসিন্দা সাত্যকী চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর মা সোনালী চট্টোপাধ্যায়। সোনালী দেবী পেশায় গৃহশিক্ষিকা। সংসারের যাবতীয় কাজ এক হাতে সামলে নেওয়া একজন সাধারণ গৃহবধূ। ছোটবেলা থেকেই ভুগোলের বইয়ে এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে পাহাড়ের প্রতি তাঁর ভালবাসা জন্মায়। কিন্তু সংসার ও দায়িত্বের চাপে সেই স্বপ্ন বহু বছর ধরে কেবল ইচ্ছেই থেকে গিয়েছিল। তবে কোভিডের সময় যেন সেই জীবনে এল এক নতুন মোড়। নিজের ছেলে সাত্যকীর সঙ্গে অভিযানে তাঁরা সঙ্গে নেননি কোনও গাইড বা পোর্টারও।
আরও পড়ুনঃ ১৬ কোটি টাকার জালিয়াতি কাণ্ডে বান্ধবীর বাড়ি থেকে উদ্ধার ১৬ লক্ষ নগদ, ৪০ লক্ষ টাকার গয়না ও গাড়ি
২০২৫ সালের ১২ এপ্রিল, মা সোনালী, ছেলে সাত্যকী ও সাত্যকীর এক বন্ধু—এই তিনজন রওনা দেন রক্সৌলের উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে সীমান্ত পার করে পৌঁছান কাঠমাণ্ডু। পরদিন গাড়িতে করে যান সালেরি, সেখান থেকে সুরখে। সুরখে থেকে শুরু হয় মূল ট্রেক। আটদিন ধরে পাথুরে পথ আর হিমালয়ের শ্বাসরোধ করা ঠান্ডা পেরিয়ে তারা পৌঁছান এভারেস্ট বেসক্যাম্প। সেখান থেকে কালাপাথর অভিযান সম্পুর্ণ করে শুরু হয় নামা, যা শেষ হয় পাঁচদিনে। তবে এই অভিযান একদিনে শুরু হয়নি। ২০১৮ সালে মা-ছেলের প্রথম ট্রেক ছিল সান্দাকফু। তারপর একে একে ২০১৯ সালে কেদারকণ্ঠ, ২০২০ সালে পঞ্চকেদার, ২০২১-এ পাঙ্গারচুলা, ২০২৩-এ ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স ও হেমকুণ্ড সাহিব, ২০২৪-এ অন্নপূর্ণা সার্কিট। এবার ২০২৫-এ এভারেস্ট বেসক্যাম্প।
সোনালী দেবী প্রমাণ করেছেন, বয়স বা পেশা কোনও বাধা নয় স্বপ্নপূরণের পথে। পাহাড়কে ভালোবাসলে, তাকে জয়ের সাহসও আসে নিজের মধ্যে থেকেই। আজও এভারেস্ট বেসক্যাম্পের অভিজ্ঞতা চোখে-মুখে নিয়ে তিনি তৈরি হচ্ছেন পরবর্তী অভিযানের জন্য।