সোনারপুরঃ সোনারপুরের কোদালিয়ার দুর্গাপুজো শুধু একটি পারিবারিক উৎসব নয়, এটি ইতিহাসের এক অমূল্য দলিল। প্রায় তিনশো বছরের কাছাকাছি পুরনো এই পুজোর সূচনা হয়েছিল নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসুর বাবা জানকীনাথ বসুর হাত ধরে। কটক থেকে কোদালিয়ায় এসে বসবাস শুরু করলে তিনি এই পুজোর প্রথা চালু করেন। আজও সেই একই নিয়মে বসু পরিবারের সদস্যরা এই পুজো করে আসছেন।
নেতাজীর মা ভগবতী দেবী ছিলেন ভক্তিমতি মহিলা। মূলত তাঁর উদ্যোগেই এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়। মন্দির প্রাঙ্গণে একদিকে দুর্গাদালান, অন্যদিকে প্রভাবতী দেবীর প্রতিষ্ঠা করা বিষ্ণু মন্দির রয়েছে, যেখানে নারায়ণ শিলা প্রতিদিন পূজিত হয়। দুর্গাপুজোর পাশাপাশি ঘটা করে লক্ষ্মীপুজোও আয়োজন করা হয়। মহালয়ার পরের দিন থেকেই ঘট বসানোর মাধ্যমে শুরু হয় পূজার আচার। প্রথা মেনে নবমীর দিন আজও কুমড়ো বলির আয়োজন হয়। ইতিহাস বলছে, দেশে থাকলে এবং জেলে না থাকলে নেতাজী স্বয়ং এই পুজোতে হাজির থাকতেন। মায়ের সঙ্গে ঠাকুরদালানে বসে তিনি পূজার অংশ নিতেন। শুধু তাই নয়, এই বাড়িতে এলে এলাকার বিপ্লবীরাও তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। ফলে কোদালিয়ার এই ঠাকুরদালান হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অনন্য সাক্ষী।
আগে মন্দিরেই প্রতিমা তৈরি হতো। বর্তমানে প্রতিমা তৈরি হচ্ছে হরিনাভীর শিল্পী শুভেন্দু চক্রবর্তীর হাতে, যাঁদের পরিবার বংশপরম্পরায় এই প্রতিমা গড়ে আসছেন। তিনি জানিয়েছেন, মহালয়ার মধ্যেই সমস্ত কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। ঐতিহ্য, ভক্তি আর নেতাজীর স্মৃতিকে বুকে নিয়ে আজও সমান মর্যাদায় অনুষ্ঠিত হয় কোদালিয়ার বসু পরিবারের দুর্গাপুজো।
