নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে আজ শিক্ষার আলো পৌঁছে যাচ্ছে “এক টাকার পাঠশালা”-র মাধ্যমে। দিনমজুর, পরিচারিকা, কিংবা মৎস্যজীবী পরিবারের সন্তানরা, যাদের শৈশব কেটেছে দিশাহীন ঘোরাফেরায়, আজ তারাই স্কুল ব্যাগ কাঁধে বইখাতা নিয়ে হাঁটছে আলোর পথে।
আরও পড়ুনঃপুজোর ছুটিতে পাহাড়ের টানে, দার্জিলিংয়ে বেড়াতে চলুন ম্যাড অ্যাবাউট ট্রাভেল-এর সঙ্গে
এই শিক্ষাযাত্রার সূচনা করেছে সোনারপুরের ‘সোনার তরী চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’, ক্যানিংয়ের গৌড়দহ এবং ঝড়খালির স্থানীয় মানুষজন। প্রায় এক বছর আগে ঝড়খালির একেবারে পিছিয়ে পড়া মৎস্যজীবী পরিবারগুলির ২৩ জন শিশুকে নিয়ে শুরু হয় এই অভিনব পাঠশালা। বর্তমানে এই তিনটি কেন্দ্রে—ঝড়খালি, গৌড়দহ ও বীরভূমে—মোট ৪২০ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে। এই পাঠশালায় কেজি ক্লাস থেকে শুরু করে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়ানো হয়। শুধু শিক্ষাই নয়, এখানকার ছাত্রছাত্রীদের শেখানো হচ্ছে গান, নৃত্য, ক্যারাটে ও অন্যান্য খেলাধুলাও। বই, খাতা, পেন থেকে স্কুলব্যাগ—সব কিছুই দেওয়া হয় বিনামূল্যে। এই উদ্যোগের মূল কারিগর শ্রীকান্ত বধূক, যিনি শুরু থেকেই এই প্রজেক্টের নেতৃত্বে রয়েছেন। তাঁর কথায়, “এই পাঠশালার লক্ষ্য শুধু পড়াশোনা নয়, বরং এই শিশুদের একটা মর্যাদাপূর্ণ ভবিষ্যৎ তৈরি করা।” তিনি আরও জানান, মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনার সমস্ত দায়িত্ব নিচ্ছে ট্রাস্ট নিজে। ঝড়খালির এক গৃহবধূ আবেগে বলেন, “আগে ওরা সারাদিন লাটাই ঘুড়ি নিয়ে মাঠে ঘাটে ঘুরত, এখন বই নিয়ে স্কুলে যায়, ওদের চিন্তা ভাবনাও বদলে যাচ্ছে।”
এই এক টাকার পাঠশালা শুধু একটি বিদ্যালয় নয়—এ যেন নতুন ভবিষ্যতের আশার আলো। উদ্যোগটির লক্ষ্য ভবিষ্যতে একটি পূর্ণাঙ্গ স্কুল প্রতিষ্ঠা করা, যাতে সুন্দরবনের মতো পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের প্রতিটি শিশুর জীবনে পৌঁছায় শিক্ষার আলো। এ যেন এক টাকার বিনিময়ে, লক্ষ টাকার স্বপ্ন। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা—এই আলোর রোশনাই আরও কতদূর ছড়াতে পারে!
