সুন্দরবনঃ বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী সংরক্ষণে এক যুগান্তকারী সাফল্যের পথে হাঁটল পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প। পৃথিবীর অন্যতম বিলুপ্তপ্রায় কচ্ছপ প্রজাতি বাটাগুড় বাস্কা বা পোড়া কাঠা সংরক্ষণে তারা হাতে কলমে প্রমাণ করল, সদিচ্ছা ও বিজ্ঞান সম্মিলিত হলে জীববৈচিত্র্য রক্ষা সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ শিক্ষকতার প্রতি আত্মনিবেদন: অবসরের পরেও নিঃস্বার্থভাবে পড়াচ্ছেন তাপস কুমার পড়ুয়া
একসময় এই কচ্ছপ ভারত ছাড়িয়ে মায়ানমার, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া যেত। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, বাসস্থান ধ্বংস ও চোরাশিকারিদের কারণে প্রকৃতির বুক থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায় এই প্রজাতিটি। ২০০৮ সালে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের পক্ষ থেকে ৭টি পুরুষ ও ৫টি স্ত্রী কচ্ছপ নিয়ে শুরু হয় সংরক্ষণের কাজ। প্রথমদিকে প্রাকৃতিক উপায়েই বংশবৃদ্ধি হলেও, গত তিন বছরে কৃত্রিম উপায়ে ডিম ফোটানোর গবেষণায় মনোনিবেশ করে বনদফতর। সেই প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ চলতি বছরে ২২৩টি কচ্ছপ কৃত্রিম উপায়ে জন্ম নিয়েছে, যা সংরক্ষণ প্রচেষ্টায় এক বড় সাফল্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে ৬৫০-র বেশি বাটাগুড় বাস্কা কচ্ছপ রয়েছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে। এই সংখ্যা শুধু সাফল্যের প্রতীক নয়, বরং আশার আলোও। প্রকৃতি প্রেমী এবং গবেষকদের মতে, এই প্রজাতিকে বাঁচিয়ে রাখার এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যতের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ পরিসরে এই প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরেও এই উদ্যোগ প্রশংসিত হতে পারে বলেই মনে করছেন পরিবেশবিদরা। বাটাগুড় বাস্কা কচ্ছপের সংরক্ষণ প্রকল্প প্রমাণ করল—অদম্য ইচ্ছা, বিজ্ঞান ও নিষ্ঠা থাকলে প্রকৃতিকে আবারও প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়া যায়।
