
নরেন্দ্রপুরঃ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও ব্যক্তিগত জীবনের একের পর এক বিপর্যয়কে হার মানিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যের অষ্টম স্থান অধিকার করেছে ওম কুণ্ডু। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯০। সোনারপুরের সারদা বিদ্যাপীঠ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ওম নিজের অধ্যবসায়, মনের জোর এবং পরিবার ও শিক্ষকদের সহায়তায় এই অসাধ্য সাধন করেছে।
আরও পড়ুনঃ নরেন্দ্রপুর মিশনের কৃতিত্ব: মাধ্যমিকের পর উচ্চমাধ্যমিকেও নজরকাড়া সাফল্য দুই যমজ ভাই-সহ চার ছাত্রের
ওমের জীবনে বিপর্যয়ের শুরু একাদশ শ্রেণিতে পড়াকালীন, যখন সে নার্ভের জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হয় এবং টানা চার মাস তাকে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়। তার ঠিক পরেই আসে আরও এক কঠিন ধাক্কা—মাধ্যমিক পরীক্ষার পরেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবার মৃত্যু। এই ধাক্কায় মন ভেঙে পড়েনি সে। বরং আরও দৃঢ় মনোবল নিয়ে এগিয়ে চলে লক্ষ্যপূরণের পথে। মা সুনন্দা কুণ্ডু পাশে থেকেছেন ছায়ার মতো। তিনিও চান ছেলে চিকিৎসক হয়ে সমাজের সেবা করুক। ওম জানায়, বই পড়া তার জীবনের প্রথম ও প্রধান নেশা। মোবাইল ঘাঁটা ও গান শোনা তার অবসরের সঙ্গী হলেও দিনের বেশিরভাগ সময় সে কাটায় বইয়ের সঙ্গেই। ক্রিকেট খেলাও তার ভীষণ পছন্দ। সময় পেলে মাঠেও নেমে পড়ে খেলতে। দেশ নিয়ে সচেতন মত প্রকাশ করতেও পিছপা নয় ওম। সম্প্রতি কাশ্মীরের ঘটনার প্রসঙ্গে ওম জানায়, দেশের শান্তি বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। সে মনে করে, ভারতের পদক্ষেপ সঠিক হলেও যুদ্ধ যেন কোনওভাবেই না হয়—এই বিষয়ে সবাইকে সংবেদনশীল থাকতে হবে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মানসী চৌধুরী জানান, “ওম ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় অত্যন্ত ভালো। খুবই ভদ্র ও সুশৃঙ্খল ছাত্র। ওর সাফল্যে স্কুল গর্বিত।”
নিজের সীমাবদ্ধতা ও দুঃখ ভুলে লক্ষ্যের প্রতি অটল থেকে আজ যে উচ্চতায় পৌঁছেছে ওম, তা নিঃসন্দেহে এক অনুপ্রেরণা। তার স্বপ্ন ভবিষ্যতে একজন সফল চিকিৎসক হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। ওমের এই জেদ, মনোবল এবং নিষ্ঠা তাকে জীবনের প্রতিটি লড়াইয়ে জয়ী করুক—এই কামনায় তার পাশে রয়েছে গোটা সমাজ।