
বোড়ালঃ দীর্ঘ দু’দশকেরও বেশি সময় পর অবশেষে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার অন্যতম প্রাচীন এবং বৃহত্তম সমবায় ব্যাঙ্ক—বোড়াল ইউনিয়ন কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের পরিচালন কমিটির দখল নিল তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় এলেও এই প্রথমবার তৃণমূল কংগ্রেস এই ঐতিহ্যবাহী ব্যাঙ্কের পরিচালন ক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নিল। বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই জয়লাভ করেছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। ২০২৫ সালের ১১ই মার্চ পশ্চিমবঙ্গ সমবায় দপ্তরের নির্দেশিকা অনুযায়ী পরিচালন কমিটির নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ৮ই এপ্রিল ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ২০,৬১৬ জন এবং ডেলিগেটস পদের সংখ্যা ছিল ৬৯টি। যদিও ২০শে এপ্রিল ছিল ভোটগ্রহণের নির্ধারিত তারিখ, কিন্তু কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তার আর প্রয়োজন হয়নি।
আরও পড়ুনঃ সোশাল মিডিয়ার ফাঁদে গৃহবধূ, বিক্রির ছক ভেস্তে দিল তাঁর উপস্থিত বুদ্ধি
সোনারপুর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ফিরদৌসী বেগমের নেতৃত্বে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তৃণমূল ঘনিষ্ঠ একদল দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রার্থী। প্রত্যেকেই সময়মতো মনোনয়ন জমা দেন এবং ভোটের ময়দানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই জয় নিশ্চিত হয়। বিজয়ের আনন্দে রবিবার সকল জয়ী প্রার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় জয়ী হওয়ার সার্টিফিকেট। এরপর তাঁরা আনন্দ উদ্যাপন করেন সবুজ আবীর খেলে। এই ঐতিহাসিক জয় প্রসঙ্গে সোনারপুর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের সাংগঠনিক প্রধান নজরুল আলি মণ্ডল বলেন, “এই ব্যাঙ্ক বহু পুরনো ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। তৃণমূল পরিচালনায় এলে এই ব্যাঙ্ক আরও লাভজনক হবে এবং সাধারণ গ্রাহকের আস্থা আবার ফিরে আসবে। আমরা চাই উন্নয়নমুখী ও স্বচ্ছ পরিচালনার মধ্য দিয়ে এই ব্যাঙ্কের পুরনো গৌরব ফিরিয়ে আনা হোক।”
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৩০ সালে বোড়াল ইউনিয়ন কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক গঠিত হয়, মূলত মহাজনদের অত্যাচার থেকে দরিদ্র মানুষদের রক্ষা করতেই এই ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। প্রথম দিকে এর কর্মকাণ্ড ছিল অত্যন্ত সফল। ২০০১ সাল পর্যন্ত ব্যাঙ্কের আয় ও গ্রাহক সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্য, যার মধ্যে গ্রাহক সংখ্যা ছিল প্রায় ২৬ হাজার। কিন্তু ২০১২ সালের পর পরিচালন কমিটির ব্যর্থতায় ব্যাঙ্কের আর্থিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। আমানতকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়। শেষবার ১৯৯৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পরিচালন কমিটির নির্বাচন হয়েছিল এবং ২০০২ সালের ৬ই আগস্ট পর্যন্ত ছিল তাদের মেয়াদ। ২০১৭ সালে নতুন সিইও নিয়োগের পর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়। দীর্ঘ সময় পরে, ২০২২ আর্থিক বর্ষে ব্যাঙ্ক আবার লাভজনক অবস্থায় ফিরে আসে। এই প্রেক্ষাপটে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ে আশাবাদী এলাকার মানুষজন। তাঁরা মনে করছেন, নতুন নেতৃত্ব ব্যাঙ্কের আর্থিক অবস্থাকে আরও মজবুত করবে এবং সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করবে।