নরেন্দ্রপুরঃ নরেন্দ্রপুর থানার ফরতাবাদ এলাকার একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে এক যুবকের রহস্যমৃত্যুকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মৃত যুবকের নাম সন্দীপ সিং (২০)। পরিবারের তরফে হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ, দীর্ঘ সময় ধরে ছেলে নিখোঁজ থাকলেও হোম কর্তৃপক্ষ কোনও রকম তথ্য দেয়নি। এমনকি ছেলেকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৭ই এপ্রিল ভোরবেলায় সন্দীপের মৃত্যু হয়। কিন্তু তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি। পরিবারের দাবি, মৃত্যুর পরপরই হোম কর্তৃপক্ষ তা স্থানীয় থানায় জানায়নি, বরং বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়। পরে ঘটনার কথা জানাজানি হতেই সন্দীপের পরিবার ছুটে আসে এবং পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
এই হোমটি “আরোগ্য নিকেতন” নামে পরিচিত ছিল, এবং এটি একটি নেশামুক্তি কেন্দ্র হিসেবে পরিচালিত হতো। হোমটি রাজপুর সোনারপুর পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ফরতাবাদ এলাকায় অবস্থিত। সেখানে মোট ১২ জন আবাসিক ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। মৃতের বাবা সন্তু সিং অভিযোগ করেন, তাঁর ছেলেকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে। তিনি হোমের ম্যানেজার সুদীপ ব্যানার্জি, সায়ক ব্যানার্জি সহ বাবলু এবং সমীর নামে আরও দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর দাবি, হোমের মধ্যে একাধিক গাফিলতির প্রমাণ রয়েছে। সেখানে চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না, নজরদারির অভাব ছিল এবং আবাসিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হতো। অভিযোগ পাওয়ার পর নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই হোমটিতে গিয়ে দেখা গেছে সেটি আপাতত বন্ধ। গেটের বাইরে তালা ঝুলছে, আবাসিকদের সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। হোম কর্তৃপক্ষের কেউ আর সেখানে নেই। তাঁরা পলাতক বলেই মনে করা হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় গাফিলতির পাশাপাশি খুনের অভিযোগও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে একাধিক অসঙ্গতির ইঙ্গিত মিলেছে। সন্দীপের মৃতদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর আরও পরিষ্কার হবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ। এই ঘটনা ঘিরে স্থানীয় মহলেও ক্ষোভ ছড়িয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এমন একটি সংবেদনশীল হোমে নজরদারির অভাব রয়েছে প্রশাসনেরও। পরিবার চাইছে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে কড়া শাস্তি দেওয়া হোক। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হোমের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। তদন্তের অগ্রগতি অনুযায়ী, প্রয়োজনে হোমের লাইসেন্স নিয়েও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
