
বারুইপুরঃ চাকরি চলে গিয়েছে সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তাঁরা, তবু স্কুলের স্বার্থে উপস্থিত হচ্ছেন কাজে। এমন বিরল উদাহরণ তৈরি করলেন বারুইপুর গার্লস হাইস্কুলের দুই কর্মী—কৃষ্ণামাল দাস ও শুভঙ্কর নস্কর। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর গার্লস হাইস্কুল। প্রায় ২ হাজার ছাত্রী পড়াশোনা করে এখানে। সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশে সম্প্রতি স্কুলের তিনজন শিক্ষিকা, একজন গ্রুপ সি কর্মী এবং একজন গ্রুপ ডি কর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে। নির্দেশ আসার পর থেকেই শিক্ষিকারা স্কুলে অনুপস্থিত। তবে ব্যতিক্রম হয়ে উঠেছেন গ্রুপ ডি কর্মী কৃষ্ণা ও গ্রুপ সি কর্মী শুভঙ্কর। চাকরি না থাকা সত্ত্বেও তাঁরা প্রতিদিন স্কুলে আসছেন, পালন করছেন নিজেদের প্রাক্তন দায়িত্ব।
আরও পড়ুনঃ কাজের নাম করে উত্তরপ্রদেশে নিয়ে গিয়ে কিডনি পাচার! চাঞ্চল্য বারুইপুরে, আটক দুই
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তৃষা ভট্টাচার্য বলেন, “গ্রুপ সি ও ডি–তে দু’টি করে পদের মধ্যে একজন করে কর্মী কিছুদিন আগেই অবসর নিয়েছেন। বর্তমানে এই দুই কর্মী ছাড়া স্কুল চালানোই কঠিন হয়ে পড়ত।” কৃষ্ণার দায়িত্বে পড়ে ঘন্টা বাজানো, ক্লাস রুম খোলা, নোংরা পরিষ্কার করা–সহ অন্যান্য যাবতীয় কাজ। শুভঙ্করের উপর পড়ে অফিস চালানো, রেজিস্টার সামলানো–সহ প্রশাসনিক দায়িত্ব। তাঁদের মানসিক অবস্থা যে ভালো নেই, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দীর্ঘদিনের কাজের জায়গা, পরিচিত পরিবেশ—সব হঠাৎ করেই চলে গিয়েছে হাতে থেকে। তবু পড়ুয়াদের কথা ভেবে, স্কুলের স্বার্থে তাঁরা নিজের কষ্টকে পাশে রেখে প্রতিদিন হাজির হচ্ছেন স্কুলে। নিজেদের প্রতি অন্যায়ের বিচার চাইছেন তাঁরা, তবে কোনও আন্দোলনের পথে না গিয়ে প্রশাসনের উপর ভরসা রেখে অপেক্ষা করছেন। কৃষ্ণা ও শুভঙ্কর জানিয়েছেন, “আমরা চাই, দ্রুত যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করা হোক। যারা সত্যিই যোগ্য, তারা যেন আবার কাজে ফিরতে পারে। আমরা শুধু ন্যায়ের দাবিই করছি।”
স্কুলের অন্য কর্মী, অভিভাবক ও ছাত্রীরাও এই দুই কর্মীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। সকলেই চাইছেন দ্রুত এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হোক, যাতে স্কুলের স্বাভাবিক ছন্দ আর ব্যাহত না হয়। এই দুই কর্মীর নিষ্ঠা ও দায়বদ্ধতা নিঃসন্দেহে এক অনুপ্রেরণা হয়ে রইল শিক্ষা জগতে। যখন চাকরি চলে যাওয়ার পর বেশিরভাগ মানুষই নিজেকে গুটিয়ে নেন, তখন এই দুই কর্মীর কর্তব্যনিষ্ঠা দেখিয়ে দিল—স্কুল মানে শুধুই একটা চাকরির জায়গা নয়, এটা এক গাঢ় আবেগ, এক দায়িত্বের অনুভব।