
সোনারপুরঃ বাড়িতেই কারখানা ও হাতে তৈরি নানানধরনের কাঠের সরঞ্জাম নিয়ে ফুটপাতে বসেন তিনি ৷ যেদিন যে দোকান বন্ধ থাকে তার সামনে পলিথিন পেতে বসে থাকতে দেখা যায় তাকে ৷ সোনারপুর মোড় এলাকায় যাতায়াতের পথে অনেকেই হয়ত তাকে দেখেছেন ৷ তিনি বীনা বিশ্বাস ৷ বারুইপুরের শাসন এলাকার বাসিন্দা ৷ সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এইভাবেই ফুটপাতে বসেন নানান পসরা নিয়ে ৷ এই কাজে তাকে সাহায্য করেন তার স্বামী ৷ আগে বাড়িতেই ভুষিমালের একটি দোকান ছিল ৷ কিন্তু কোনওকারণে সেটি চলত না ৷ তাই আয়ের বিকল্প রাস্তার কথা ভাবতে শুরু করেন ৷ ততদিনে ছেলে ও মেয়ে ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করেছে ৷ ছোটবেলায় বাবাকে কাছ থেকে কাঠের কাজ করতে দেখেছেন বীনা দেবী ৷ তখন থেকেই তার কিছু অভিজ্ঞতা ছিল ৷ সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই শুরু করেন নানারকমের কাঠের তৈরির জিনিস বানানো ৷ নানারকমের জিনিস বানিয়ে ২০১০ সালে প্রথমবার সুন্দরবন মেলায় যোগ দেন ৷ ভালোই বিক্রি হওয়ায় উৎসাহ পান তিনি ৷ তার নিখুত কাজের জেরে ক্রমশ চাহিদা বাড়ে ৷ তারপর থেকে ইকোপার্ক, সায়েন্সসিটি, সল্টলেক, কৄষ্ণনগর, মেদিনীপুর সহ নানান জায়গায় মেলার খবর শুনলেই দৌড়াতেন তিনি ৷ এইভাবেই জীবনযুদ্ধে সামিল হয়ে নিজের একমাত্র ছেলেকে স্নাতক করার পথে এগিয়েছেন তিনি ৷ অন্যদিকে তার মেয়ে স্নাতক হয়ে চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছেন ৷ তার এই লড়াই আর পাঁচজনের কাছে দৄষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে ৷
ভিডিও দেখুন লিঙ্কেঃ https://www.youtube.com/watch?v=tw-JJEd20UM
রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় হস্তশিল্প মেলা চললে সেখানে যান তিনি ৷ মুলত নভেম্বর থেকে জানুয়ারী পর্যন্ত নানান জায়গায় মেলা চলে ৷ তারপর আর কোনও কাজ থাকে না ৷ তাই এইভাবেই ফুটপাতে থাকেন বসেন তিনি ৷ তার কাছে খুন্তি, চপিং বোর্ড, বিভিন্ন সাইজের কাঠের ট্রে, কোস্টার, গ্লাসের ঢাকনা, এলকার্ট, হামানদিস্তা, আয়রন রডের সাইকেল ও রিক্সো, জুয়েলারী বাক্স, ফুলদানি এমনকি ম্যাসেজের সরঞ্জামও ৷ বাড়িতেই স্বামী ও স্ত্রী মিলে একটি ছোটমত কারখানাও বানিয়েছেন তারা ৷ এইসব জিনিস তৈরি করে তারা পাইকারি রেটেও নানান জায়গায় বিক্রি করেন ৷ পথচলতি বহু মানুষ উৎসাহ নিয়ে তার দোকানে ভিড় জমান ৷ কেউ কেউ আবার পছন্দসই নানান জিনিস কিনেও নেন ৷ এইভাবেই জীবন যুদ্ধের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বীনা বিশ্বাস ৷